খুব চিন্তা হচ্ছে বর্তমান বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে। আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম যেখানে স্বাধীনতার ৫৪ বছরে এসেও আতঙ্ক, ভয় ও শঙ্কা নিয়ে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে? সমগ্র বাংলাদেশ আজ থমথমে, মনে হচ্ছে যেন গম্ভীর হয়ে আছে। সাধারণ মানুষের মনে অগ্নিদহ চলছে কিন্তু তারা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। চিৎকার করেও তারা তাদের মনের কথা, কষ্ট বা যন্ত্রণার কথা স্বাধীনভাবে বলতে পারছে না। এ এক ভয়ংকর পরিস্থিতি! তাছাড়া কেনইবা সারাদেশে চলছে দিনের পর দিন কারফিউ! সাধারণ মানুষ স্বচ্ছন্দে তাদের কর্মস্থলে ফিরতে পারছে না। সাধারণ মানুষ দৈনন্দিন চাহিদা পূরণের জন্য নিয়মিত হাট বাজার করতে পারছে না। হাটবাজারে গেলেও দ্রব্যমূল্যের দাম হয়ে গেছে জনগণের ধরাছোঁয়ার বাইরে। সবচেয়ে কঠিন হয়ে পড়েছে প্রান্তিক পর্যায়ের শ্রমজীবী মানুষের জন্য, যাদের আয় নির্ভর করে দিনে আয় করে দিন শেষে বাজার করা তাদের জন্য। এছাড়া মধ্যবিত্ত পেশাজীবীরাও ভালো নেই। তাদের মনেও গভীর অসন্তোষ বিরাজ করছে। কারণ তাদের বর্তমান আয় ও দ্রব্যমূল্যের দামের অনুপাত একেবারে ঋণাত্মক পর্যায়ে রয়েছে। মাসকাবারি বেতন দিয়ে মাস চলা যেন হিমশিম খাওয়া অবস্থা! যারপরনাই দুর্নীতি করা যেন সাইকোলজিক্যাল ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা দেখতে পাই রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পর্যায়ের সিনিয়র থেকে জুনিয়র কর্মকর্তা বা কর্মচারী সকলেরই দুর্নীতির খবর প্রকাশ পাচ্ছে প্রতিনিয়ত। দুর্নীতি করে আবার সেসব টাকা দেশে বিনিয়োগও হচ্ছে না, পাচার হয়ে যাচ্ছে দেশের বাইরে! বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হচ্ছে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ক্রমশ নাজুক অবস্থানে এসে ঠেকেছে। একটার পর একটা ইস্যু সামনে চলে আসছে। ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা সমালোচনা চলাকালীন নতুন ইস্যু এসে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিচ্ছে, যার দরুন পুরাতন ইস্যু জনগণের চোখের আড়াল হচ্ছে। জানা যাচ্ছে না সেগুলোর বিচার বা পরিণতি আসলে কি হলো?
এত এত দুর্নীতির খবর, ইস্যুর খবর, সিন্ডিকেটের খবর, টাকা পাচারের খবর, ফৌজদারির খবর যতটা প্রকাশিত হচ্ছে সেই তুলনায় সেসবের বিচারের খবর কিন্তু জনগণের সামনে প্রচার হচ্ছে না। যার দরুন জনগণের মনেও বিচার ব্যবস্থার ওপর প্রশ্ন চলে আসছে। আদৌ কি এইসব দুর্নীতিবাজ-অপরাধীদের বিচার হয় দেশে? এইজন্য যেন অপরাধ প্রবণতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও অবনতি ঘটছে অহরহ। দুর্নীতিবাজরা এই সুযোগটাকেই পুঁজি করে লুটপাট কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, আর পার পেয়ে যাচ্ছে। লুটপাট শেষে যখনই তাদের দুর্নীতির খবর প্রকাশিত হচ্ছে তখনই তারা অর্থ-সম্পদ নিয়ে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন তাদের ধরার কেউ নেই! আর এখানেই প্রশ্ন ওঠে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বা প্রশাসনের উপর। আরো একটা বিষয় দেখা যায়, চাকরিতে থাকাকালীন দুর্নীতির খবর তেমন একটা প্রকাশিত হয় না! চাকরি থেকে অবসর হওয়ার পরেই তাদের দুর্নীতির খবর প্রকাশিত হচ্ছে। এটা যেন প্রমাণ করে চাকরিতে থাকাকালীন তারা কতটা ক্ষমতাধর ছিল বা যারা ধরবে হয়তো তাদেরকেও দুর্নীতির ভাগ দেওয়া হয়েছিল বা অন্য কোন কারণ থাকতে পারে। তবে যাই থাকুক বিষয়টি কিন্তু মেনে নেওয়ার মতো না। একটা বিষয় খুবই বিস্মিত করেছে দেশের জনগণকে যখন প্রধানমন্ত্রী তার বাসার পিয়নের ৪০০ কোটি টাকার দুর্নীতির খবর প্রকাশ করলেন এক সংবাদ সম্মেলনে। তখন তার মুখের অভিব্যক্তিতে যেন প্রকাশ পেল তার অসহায়ত্বের ছাপ। দেশের শীর্ষস্থানে বসেও এত এত চৌকস গোয়েন্দা সংস্থা থাকা সত্ত্বেও কেউ ধরতে পারল না যে তারই বাসায় অবস্থান করা অসাধুটি ক্রমে ক্রমে কোটি টাকার পাহাড় গড়ছে! এটা যেন প্রদীপের নিচের অন্ধকারকে প্রকাশ করে, এটা প্রশাসনের দুর্বলতার কথাই ব্যক্ত করে, এটা প্রকাশ করে দুর্বল হয়ে পড়েছে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো।
আসলে একটা দেশ যে এত এত শ্বাপদ-সংকুল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা ভাবলেই চিন্তায় পড়তে হয়। বেশ কিছুদিন যাবৎ লক্ষ্য করছি রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতার জন্য ও জনগণকে তাদের অধিকারের জন্য রাস্তায় নামতে হচ্ছে, মিছিল দিতে হচ্ছে, স্লোগান দিতে হচ্ছে। কিন্তু এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না! জনগণের অধিকারের জন্য ন্যায্যতার জন্য তাদের রাস্তায় নামার আগেই রাষ্ট্রের উচিত ছিল সেসব পূরণ করা। কিন্তু তা আমরা দেখতে পাই না! আর এ সকল পরিস্থিতিকে ভর করে সুযোগ-সন্ধানীরাও দেশের পরিস্থিতিকে শান্ত থেকে উত্তাল হওয়ার দিকে নিয়ে যায়। আর যতক্ষণ না পর্যন্ত সেই আন্দোলনকে ঘিরে দেশে অরাজক পরিস্থিতির তৈরি হয় শাসক শ্রেণীও বিষয়গুলো আমলে নেয় না। তাই প্রশ্ন এখানেও উঠে, এদেশে রক্তের বিনিময় ছাড়া কি কিছুই অর্জন সম্ভব না? আর এরকম মাৎসোন্যায় পরিস্থিতিতে শাসকদের বেফাঁস মন্তব্যও আন্দোলনকারীদের মনে তীব্র অসন্তোষের কারণ হয়ে দাঁড়ায় যা ঘটনাকে আরো ঘোলাটে করতে বাধ্য করে।
বর্তমানে তেমনি একটা ঘটনা সারা দেশের শান্ত পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করেছে। দীর্ঘদিন থেকে দেশের কোটা ব্যবস্থা নিয়ে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছিল চাকরিপ্রার্থী জনগণের মনে। চাকরিতে বিভিন্ন ধরনের কোটা থাকায় মেধাবীদের জায়গা খুবই সংকীর্ণ হয়ে পড়েছিল। যেমন নারী কোটা ১০ শতাংশ (আবার প্রাইমারিতে নারী কোটা ৬০ শতাংশ), পোষ্য কোটা ১০ শতাংশ (রেলওয়েতে পোষ্য কোটা ৪০ শতাংশ), মুক্তিযোদ্ধা কোটা (মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতিদের জন্য) ৩০ শতাংশ, জেলা কোটা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা ৫ শতাংশ, শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটা ৫ শতাংশ। দেখা যায় সরকারি চাকরিতে যোগ-বিয়োগে মোট ৫৬ শতাংশ কোটা থাকায় মেধাবীরা মাত্র ৪৪ শতাংশে নিয়োগ পায়। কিছু কিছু চাকরিতে এর থেকেও বেশি শতাংশ কোটা থাকে, তাই সেসব চাকরিতে মেধাবীরা আরো কম শতাংশে নিয়োগ পায়। আবার এই কোটা ব্যবস্থা থাকায় কোটায় পর্যাপ্ত কোটাধারী না পাওয়ায় মেধাবীদের নেওয়া হলেও এখানে দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগ কার্যক্রম চলার বিভিন্ন খবর শুনতে পাই। তাছাড়া চাকরি পরীক্ষায় অহরহ প্রশ্নফাঁস কেলেঙ্কারি তো আছেই। এমনকি দেশের সবচেয়ে মেধাবী ও চৌকস প্রার্থীদের বাছাই কার্যক্রম হিসেবে পরিচিত বিসিএস পরীক্ষাতেও প্রশ্নফাঁস ও দুর্নীতির খবর প্রকাশিত হয়েছে। যা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক! এরকম নানা অসন্তোষ পঞ্জিভূত হয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনে। তাই তারা কোটা ব্যবস্থার সংস্কার চেয়ে যখন রাস্তায় নামে, দীর্ঘদিন যাবৎ তাদের আন্দোলন কর্মসূচি চালায়, জনগণ সাময়িক অসুবিধায় পড়ে ঠিকই কিন্তু তবুও সাধারণ জনগণের সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া বিভিন্ন বক্তব্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় তারাও মানসিকভাবে চলমান কোটা সিস্টেমের বিরোধী। এমনকি সে সময় শাসক শ্রেণীরও অনেকের মুখে শোনা যায় তারাও কোটা ব্যবস্থার সংস্কার চায়। কিন্তু আগুনে ঘি ঢেলে দেয় শাসক শ্রেণীর উচ্চ মহলের কয়েকজনের কিছু বিরূপ মন্তব্য। যার কারণে আন্দোলন যেন আরো ঘনীভূত হয়। শাসক শ্রেণীর আদর্শের ছাত্র সংগঠনও এই আন্দোলনকে বেগবান করতে অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। তারা যখন আন্দোলনকারীদের বিপরীতে বা বিপক্ষে অবস্থান করেছে -শোনা যায় তারা যখন বিভিন্ন অস্ত্র হাতে আন্দোলনকে থামাতে চেষ্টা করেছে তখনই রাজপথ উত্তাল হয়েছে। পাশাপাশি দেশের সর্বোচ্চ আসনের ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে থাকা আন্দোলনকারীরা, যারা ভেবেছিল হয়ত তিনি এর একটা সমাধান করবেন কিন্তু সেখান থেকেও যখন সমাধানের পরিবর্তে আন্দোলনকারীদেরকে কটাক্ষ শুনতে হল তখনই আন্দোলন সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ল। দেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে রাস্তায় নেমে পড়ল। শাসক শ্রেণীর ওই মন্তব্যগুলো যেন মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড় করিয়ে দিলো শাসক শ্রেণীর ছাত্র সংগঠন ও আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে। দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর বিতর্কিত অবস্থানও সাধারণের মনে তাদের প্রতি তীব্র অসন্তোষের জন্ম দিয়েছে। যার দরুন শান্ত আন্দোলন হয়ে উঠেছিল সহিংসরূপে। আর সবচেয়ে বড় প্রভাবটা পড়েছে দেশজুড়ে আন্দোলনকারীদের উপর গুলি করা ও ছয় জন শিক্ষার্থীর প্রাণ চলে যাওয়ায়। যেখানে নিরস্ত্র আবু সাঈদের উপর পুলিশের গুলি চালানোর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হওয়া আন্দোলনকে গণআন্দোলনে রূপান্তর করতে প্রভাবিত করেছে। আবু সাইদের মৃত্যুর দৃশ্যটি ছিলো অত্যন্ত মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক। জনতার উপর পুলিশের এমন অমানবিক গুলি চালানো অত্যন্ত গর্হিত কাজ হয়েছে। সাধারণ জনগণ এটা মেনে নেয়নি। সাধারণ জনগণ এর তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পুলিশের নিরস্ত্র আবু সাঈদের বুকের উপরে গুলি করা যেমন আইনবিরুদ্ধ তেমনি ছিল নিন্দনীয়। অন্যদিকে আন্দোলনে সেনাবাহিনী নেমেও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। জাতিসংঘের বিভিন্ন অপারেশনের জন্য নিয়োজিত কাজ ছাড়া জাতিসংঘের লোগো সম্বলিত অস্ত্র বা ভেইকল ব্যবহার করা যায় না। কিন্তু এই আন্দোলনকে দমাতে সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত কয়েকটি এপিসি রাস্তায় চলতে দেখা গেছে। এমনকি সেনাবাহিনীকেও জনতার উদ্দেশ্যে গুলি করার কিছু ছবি ও ভিডিও ফুটেজ দেখা গেছে। যার জন্য জনমনে তাদের প্রতি তীব্র অসন্তোষ ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
সংসার কিভাবে পরিচালিত হবে সেটা নির্ভর করে গৃহকর্তার ওপর। আর সংসারে কারো মন খারাপ হলে কী উপায়ে বা কতটা সুন্দরভাবে তার সমাধান করা হবে তা নির্ভর করে গৃহকর্তার দক্ষতার উপর। তেমনি চলমান আন্দোলনকে আজকের এই রূপে পৌঁছতে দেওয়া যেন সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তাছাড়া আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে এত এত মৃত্যুর খবর পাচ্ছি, হতাহতের খবর পাচ্ছি তা সত্যিই দুঃখজনক ও হতাশাজনক। দেশজুড়ে যখন এমন দুর্বিষহ বা উৎকণ্ঠাজনক পরিস্থিতি বিরাজ করছে তখন দেশের পরিস্থিতি শান্ত রাখার জন্য দেশে কারফিউ জারি করা ও দেশের ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো বন্ধ রাখাও সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। জনগণ দেশের অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারছে না। আর এরকম উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে যেসব বাবা-মায়ের সন্তান দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে ও দেশের বিভিন্ন শহরে চাকুরি করছে তাদের খোঁজ খবর নিতেও তাদের অসুবিধা হচ্ছে। জনমনে আতঙ্ক ভর করছে। এছাড়া বহির্বিশ্বের জনগণও বাংলাদেশের চলমান ঘটনা পরিস্থিতি সম্পর্কে উৎকণ্ঠা জানিয়েছে। তারাও বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চায়। আন্দোলনকারীদের দাবী এ পর্যন্ত অসংখ্য ছাত্র ও জনগণকে হত্যা ও গুম করা হয়েছে এবং আহত হয়েছে হাজার হাজার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী। আহত শিক্ষার্থীরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে সেখানেও তাদের উপর আক্রমণ করা হয়েছে। একই সাথে ক্ষিপ্ত জনতার হাতে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদেরও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। তাদেরও অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছে, যা সত্যিই দুঃখজনক। চলমান আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থাপনা-গাড়িসহ সম্পদের ভাঙচুর ও অগ্নিকাণ্ডে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তাও মেনে নেওয়া যায় না। আর এসবের প্রতি অনুভূতি প্রকাশেও সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। এমনটি মনে হয়েছে যেন জনগণের প্রাণের থেকেও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি সরকারের নিকট বেশি গুরুত্ব পেয়েছে।
আন্দোলন সহিংস পর্যায়ে পৌঁছানোর পর সরকার ও হাইকোর্ট বিষয়টি আমলে নিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবীর প্রেক্ষিতে ৯ম থেকে ২০ তম গ্রেডের সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সকল চাকরিতে মোট ৭ শতাংশ কোটা বহাল করে। যেখানে মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনা সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের জন্য ১ শতাংশ, শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। আরো বলা হয় নির্ধারিত কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সংশ্লিষ্ট কোটার শূন্য পদ সাধারণ মেধা থেকে পূরণ করা হবে। কিন্তু সরকারের কোটার বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হলেও আন্দোলনকারীরা এতে এখনো সন্তুষ্ট হতে পারছেনা। তাদের মতে তাদের দাবী এখন আর শুধু কোটার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। দেশব্যাপী শত শত প্রাণহানি ও হতাহতের ঘটনা ঘটার জন্য এর দায় সরকারকে নিতে হবে ও এর জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরদের ধরপাকড় বন্ধ করতে হবে, তাদের একাডেমিক ও প্রশাসনিক হয়রানি বন্ধ করতে হবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা দিতে হবে। সারাদেশের ইন্টারনেট সেবা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সচল করতে হবে ও কারফিউ উঠিয়ে দিতে হবে। যদিও অনেক বিশ্লেষক, গবেষক ও ব্যবসায়ীদের দাবি চলমান কারফিউ ও ইন্টারনেট বন্ধের কারণে প্রতিদিন দেশের হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে আমদানি-রপ্তানি পণ্যে ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের উপর। যেই দুটি সেক্টরকে বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদন্ড হিসেবে গণ্য করা হয়। এই ক্ষতি বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য অপূরনীয়।
দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে চাই দেশ আবার স্বাভাবিক রূপে ফিরে আসুক। এরকম প্রাণহানির ঘটনা আর না ঘটুক। জনগণকে তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য আর রাস্তায় নামতে না হোক। সরকার জনগণের পালস বুঝেই তড়িৎ সিদ্ধান্ত নিয়ে তার সমাধান করুক। দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে কর্তব্যরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাদের স্ব স্ব দায়িত্ব পালন করুক। সকল অন্যায় অপরাধের বিচার হোক। বিচারের জন্য শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর নিকটেই বিচার চাওয়ার সংস্কৃতি বিলুপ্ত হোক। রাষ্ট্রের যেই ডিপার্টমেন্টের সমস্যা সেই ডিপার্টমেন্টই তার সমাধান করুক। রাষ্ট্রের সম্পদের অপব্যবহার ও ধ্বংস না হোক। জনগণ রাষ্ট্রের সকল আইন-কানুন মেনে চলুক। মোট কথা, জনগণ যতক্ষণ না পর্যন্ত ব্যক্তিচিন্তার বাইরে এসে তার দায়িত্ব পালন না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত দেশ আগাবে না; আবার দেশকেও জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি সম্পূর্ণ নিরাপত্তা না দেওয়া পর্যন্ত জনগণ তাদের স্বার্থ চিন্তার বাইরে বেরোতে পারবে না।
লেখক: এন ইউ প্রিন্স
সহকারী শিক্ষক
হাওলাদার ডাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
সদরপুর, ফরিদপুর।
মন্তব্য