বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব টানেলের উদ্বোধন আগামীকাল

  • অনলাইন
  • শুক্রবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৩ ১০:১০:০০
  • কপি লিঙ্ক

চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধন করা হচ্ছে আগামীকাল শনিবার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেলটি উদ্বোধন করবেন। দূরত্ব কমিয়ে দ্রুত পণ্য পরিবহনের লক্ষ্যে নির্মিত হয়েছে দেশের এই প্রথম সুড়ঙ্গপথ বা টানেল। ৩.৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই টানেল মাত্র আড়াই থেকে তিন মিনিটের মধ্যে পার হওয়া যাবে।

টানেলের কারণে কর্ণফুলী নদী দ্রুত পেরিয়ে যানবাহন চলাচলের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এই টানেলের লাইফটাইম ১০০ বছর বলা হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে নদীর তলদেশে এটিই প্রথম টানেল। এর মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ টানেল যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে।

টানেলের মাধ্যমে চট্টগ্রামের প্রধান নদী কর্ণফুলীর দুই পার এবার যুক্ত হচ্ছে ভিন্নরূপে। নদীর ওপরে যেমন নৌযান চলছে, তলদেশেও চলবে মোটরযান। টানেলটি কর্ণফুলী নদীর মোহনার কাছে পশ্চিম প্রান্তে পতেঙ্গা নেভাল একাডেমির থেকে শুরু হয়ে পূর্ব প্রান্তে চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানা (সিইউএফএল) এবং কর্ণফুলী সার কারখানার (কাফকো) মাঝখান দিয়ে আনোয়ারা প্রান্তে পৌঁছেছে।

গতকাল দুপুরে পতেঙ্গা প্রান্ত থেকে বাসে আনোয়ারা প্রান্তে পৌঁছাতে সময় লাগে মাত্র আট মিনিট।

বাসটি ১টা ৩১ মিনিটে ছেড়ে ঘণ্টায় ১৮ থেকে ২২ কিলোমিটার গতিতে ৩.৩২ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ১টা ৩৯ মিনিটে গন্তব্যে পৌঁছায়। টানেলে সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চালানো যাবে। শুরুতে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার গতিতে চালানোর অনুমতি দিচ্ছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ)।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলে দুটি টিউব রয়েছে। দক্ষিণ পাশের টিউব দিয়ে আনোয়ারা থেকে পতেঙ্গামুখী যান চলাচল করবে।

পাশেই উত্তরের টিউব দিয়ে পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারামুখী যান চলাচল করবে। প্রতি টিউবে দুই লেনের সড়ক ও জরুরি প্রয়োজনে হাঁটার জায়গা রাখা হয়েছে।
সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন  বলেন, কর্ণফুলী নদীর কারণে চট্টগ্রাম এত দিন দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। সেটা এখন যুক্ত হলো। পতেঙ্গা পর্যন্ত এত দিন যে উন্নয়ন হয়ে এসেছে, সেটা এখন টানেলের মাধ্যমে আনোয়ারা প্রান্ত হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। যোগাযোগব্যবস্থা আরো উন্নত হবে।

টানেল টিউবের দৈর্ঘ্য ২.৪৫ কিলোমিটার। টানেলের এই অংশ নদীর তলদেশে। টিউবের ভেতরের ব্যাস ১০.৮০ মিটার। টিউবসহ মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩.৩২ কিলোমিটার। দুই টিউব তিনটি সংযোগ পথের মাধ্যমে যুক্ত হয়েছে। আপৎকালে এক টিউব থেকে অন্য টিউবে যাওয়ার জায়গা রাখা হয়েছে।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক শামছুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের সড়কব্যবস্থায় বঙ্গবন্ধু টানেল নিঃসন্দেহে ভিন্নমাত্রার একটা উন্নয়ন। এত দিন আমাদের যোগাযোগ মাধ্যমে যে সনাতন পদ্ধতি ছিল, সেখানে টানেল একটা ব্যতিক্রমী ব্যবস্থা হিসেবে যুক্ত হলো।’

বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরবর্তী এলাকা থেকে পর্যটননগর কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী এলাকা টেকনাফ। দক্ষিণাঞ্চলের বিস্তৃত এই জনপদে গভীর সমুদ্রবন্দর, কয়লাভিত্তিক একাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, পর্যটনশিল্প, এলএনজি টার্মিনাল, জ্বালানি তেলের সিঙ্গল মুরিং প্রজেষ্ট ডিপোসহ বিভিন্ন মেগাপ্রকল্পের উন্নয়নকাজ চলমান। এসব মেগাপ্রকল্পে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে বর্তমানে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে বলে সংশ্ল্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান।

গাড়ি চলাচল

টানেলটি চালু হলে আপাতত দৈনিক ১৭ হাজার ২৬০ এবং বছরে ৭৬ লাখ যানবাহন চলাচল করতে পারবে। প্রকল্প পরিচালক জানান, ২৪ ঘণ্টা যানবাহন চলাচল করবে কি না, সে ব্যাপারে পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং টানেল প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী টানেলের প্রথম টিউবের বোরিংকাজ উদ্বোধন করেন। পরের বছর ১২ ডিসেম্বর দ্বিতীয় টিউবের বোরিংকাজ উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

প্রকল্প ব্যয় ১০ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা। এই প্রকল্পে চীনের ঋণ পাঁচ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা। বাকি টাকার জোগান দেয় বাংলাদেশ সরকার। টানেলের নির্মাণকাজ করছে চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কম্পানি।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

মন্তব্য