ফরিদপুরে আলফাডাঙ্গায় এ প্রথম প্লাস্টিকের ফ্রেমের ট্রে পদ্ধতিতে ধানের চারা উৎপাদন শুরু হয়েছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গতকাল বুধবার (৪ ডিসেম্বর ২০২৪) বিকালে উপজেলায় গোপালপুর ইউনিয়নের চান্দড়া এলাকায় ফসলের জমির মাঠে রোরো ধান আবাদের জন্য ট্রে পদ্ধতিতে ধান গাছের চারা উৎপাদন করছেন কৃষকরা।
এ ব্যাপারে তাদের প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা দিচ্ছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। এই পদ্ধতিতে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ট্রেতে চারা উৎপাদন করা হয়। এতে ধানের উৎপাদন খরচ কমানোসহ শ্রমিক সংকট নিরসন হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেতে সিড সোয়িং যন্ত্রের মাধ্যমে ৫০ একর লক্ষ্য মাত্রা নিয়ে আপাতত ১৫০০ ট্রেতে ১৫ একর জমির জন্য ধানের বীজ বপন করা হয়েছে। এই পদ্ধতিতে উৎপাদিত ২০ থেকে ৩০ দিনের চারা মাঠে রোপণ করা যাবে। প্রতিটি ট্রেতে ১২০ গ্রাম থেকে ১৩০গ্রাম করে ধানের বীজ বপন করা হয়। ট্রের ওপর নির্দিষ্ট পরিমাণ রাসায়নিক ব্যবহারে রোগ প্রতিরোধের পাশাপাশি বীজ বপনের ২০ থেকে ২৫ দিন পর ধানের চারাগুলো মাদুরের মতো করে তোলা হয়।
এরপর চারা রোপণ যন্ত্র রাইস ট্রান্সপ্লান্টের মাধ্যমে মাঠে রোপণ করা হয়। এ পদ্ধতিতে একজন শ্রমিক একটি মেশিন দিয়ে দিনে প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে পারবেন। ট্রে পদ্ধতিতে চারা টেনে তুলতে হয় না তাই চারার শিকড় ছিঁড়ে না। ফলে শিকড় দ্রুত মাটি থেকে খাদ্য গ্রহণ করে এবং গাছ দ্রুত বেড়ে ওঠে।
উপজেলার চান্দড়া পশ্চিমপাড়াগ্রামের কৃষক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘এ পদ্ধতিতে ধানের চারা আগে কখনো চাষ করিনি। প্রথমবারের মতো কৃষি অফিসের তত্ত্বাবধানে এ বছর ট্রেতে সমলয় পদ্ধতিতে বোরো ধানের বীজ বপন করেছি।
চান্দড়া গ্রামের হামিদুল মোল্যা, এরশাদ সর্দারসহ অন্যান্য কৃষকরা জানান, বোরো ধান চাষাবাদে এর আগে কখনো আধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে ট্রে-তে ধান-চারা উৎপাদন করা হয়নি। প্রথমবারের মতো এমন পদ্ধিতে ধানের বীজতলা করেছি। রাসায়নিক সারের পাশাপাশি জৈব সার ব্যবহার হচ্ছে। কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতায় ট্রে-তে বীজ বপন ও চারা উৎপাদন হচ্ছে। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ধানের চারা রোপণের ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, কৃষিকে আধুনিক ও লাভজনক করতে টেকসই যান্ত্রিকীকরণে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বর্তমান সরকার। যার একটি হচ্ছে সমলয় পদ্ধতি। একটি মাঠে কৃষকরা একসঙ্গে একই জাতের ধান একই সময়ে যন্ত্রের মাধ্যমে রোপণ করতে পারবেন। এ পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি, চারা রোপণ ও ধান কর্তন সবই হবে যন্ত্রের মাধ্যমে।
আরেক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাকিবুল ইসলাম বলেন,প্রচলিত রীতিতে বীজতলা তৈরি না করে জমি ও অপচয়রোধে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের যুগোপযোগী পদ্ধতি হচ্ছে সমলয় চাষ। স্বল্প জমিতে প্লাস্টিকের ফ্রেমে বা ট্রে-তে লাগানো যায় ধানের বীজ। মাত্র ২০-২৫ দিনের মধ্যে চারা হবে। তারপর রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টারের মাধ্যমে ধানের চারা রোপণ করা হবে। একটা ট্রান্সপ্ল্যান্টার ঘণ্টায় এক একর জমিতে চারা লাগাতে পারে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাইফুল ইসলাম জানান, সমলয় হলো এমন একটা পদ্ধতি, যেখানে এক সাথে বীজতলা করা, চারা রোপণ করা ও কর্তন করা হয় যান্ত্রীকিকরণের মাধ্যমে। এর ফলে ধান পরর্বতী ফসল সঠিক সময় করা সহজ হয়। এবার আমার বিনামূল্যে সার বীজ দিয়ে কৃষকদের মাধ্যমে এ পদ্ধতিতে ধানের চাষাবাদ করাচ্ছি।
এর প্রধান উদ্দেশ্য হল কৃষকদের মধ্য থেকে উদ্যোক্তা তৈরি করা। কেউ চাইলে এটাকে ব্যবসা হিসেবেও করতে পারবে। কৃষির সকল যন্ত্রের সুবিধা পাওয়ার জন্য ও কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণের জন্যই এ সমলয় পদ্ধতি। এতে কৃষকের উৎপাদন খরচ ও শ্রমিক সংকট দূর হবে
মন্তব্য